রোকন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় তার বাড়ি। তার ক্লাসে প্রথম সারির ছাত্রদের একজন সে। রোকনদের স্কুলে কবিতা আবৃত্তিতে রোকনের সমকক্ষ কেউ নেই, ছবি আঁকার হাতও নেহাত মন্দ নয়। স্কুলে এখন কুরবানির বন্ধ চলছে। রোকন তার বাবা-মা ও দাদা দাদীর সাথে থাকে। তাই তাদের দেখতে প্রতি ঈদে ঢাকা থেকে রাঙ্গুনিয়া আসেন রোকনের চাচা চাচীরা। যথারীতি এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ রোকনের বাবা চাচা যাবেন গরু কিনতে। তাদের সাথে গরুহাটে যাবে রোকন। অনেক বাছাবাছি দামাদামি করার পর অবশেষে রোকনের পছন্দ অনুযায়ী গরু কেনা হলো। গরু কিনে বাড়ি আনার পর রোকনের যতেœর যেন শেষ নেই। রোকন ঘাস, লতা, পাতা যাই পাচ্ছে কুড়িয়ে গরুকে এনে দিচ্ছে। যদিও গরুটা খাচ্ছে না। বোধ হয় মালিককে ছেড়ে আসার যন্ত্রণায় খাচ্ছে না। ঈদুল আজহার নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সবাই পশু জবাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সবার কুরবানির প্রস্তুতি দেখে রোকনের গত বছরের কথা মনে পড়লো। গত বছর গরু জবাই করায় রোকন অনেক কান্নাকাটি করে। পরবর্তীতে রোকনের বাবা হজরত ইবরাহিম আ:-এর কুরবানির ইতিহাস বর্ণনা করে শান্ত করেন তার সাত বছরের ছেলে রোকনকে। রোকনের বাবা রোকনকে আরও বোঝান যে রক্ত মাংসের পশু নয়, মনের পশুবৃত্তি বধ করাই কুরবানির আসল উদ্দেশ্য। তাই রোকন গতবারের মত আর কান্নাকাটি করে না। বরং তার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত কবিতাটি মনে মনে দৃঢ়কণ্ঠে আবৃত্তি করতে থাকেÑ
“ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ-বোধন
দুর্ব্বল ভীরু চুপ রহো ওহো খাম-খা-ক্ষুব্ধ মন।”

Share.

মন্তব্য করুন