আনন্দ উপভোগের রাজা আমার সোনামণিরা দেখ, ঈদ আবার কিভাবে চোখের পলকে চোখের সামনে হিমালয়ের মত বিশাল আনন্দ সম্ভার নিয়ে হাজির হলো। এর মধ্যে দেখতে দেখতে রকেটের মত চলে গেছে সময়। একটি বছর। সময় কারো জন্য দু’দ- অপেক্ষা করে না। তবে এই সময় কারো কারো কাছে রকেটের মত চলে যায় আবার কারো কারো কাছে পাহাড়ের মত নিশ্চল নিথর অনড় থাকে বলে মনে হয়। এর কারণ হলো যারা সুখে থাকে তাদের সুখের সময়গুলো দ্রুত চলে যায় আর যারা নানা রকম দুঃখে শোকে কষ্টে থাকে তাদের সময়গুলো কাটতে চায় না যেন।
ছোট বন্ধুরা, তোমরা হয়ত অনেকে সুখে আছো আবার অনেকেই নানা কারণে দুঃখের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছ। যারা কোনো অশান্তির মধ্যে নেই সুখের মধ্যে আছো তাদের জন্য এ ঈদ বড় আনন্দময়। আর যারা পারিবারিক নানা অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও রোগ-শোকের মধ্যে আছ তাদের কাছে এ ঈদ ততটা আনন্দময় নয়। সুখকর নয়। অশ্রুসজল চোখে কাটে তাদের আনন্দময় এ ঈদ। আবার আমাদের দেশে হয়ত এখন কোন যুদ্ধ হচ্ছে না কিন্তু এ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই যুদ্ধ হচ্ছে। যেমন ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া এসব দেশে প্রতিনিয়ত তোমাদের মত নিষ্পাপ কচি শিশুরা বোমার আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নয়ত গুলিতে গুলিতে সোনার শরীর ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তোমাদের মত কচি শিশুদের লাশ তাদের বাবা-মা বুকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী করে তুলছেন। আবার কখনো কখনো তোমাদের মত কচি শিশুদের সামনেই তাদের প্রিয় বাবা-মা মৃত্যুর দুয়ারে প্রবেশ করে চিরদিনের মতো তাদের এতিম করে তুলছে। দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে সে সব শিশুর জীবন। তাদের কাছে ঈদের নতুন জামা কাপড়ের কোনো গুরুত্ব নেই। কেবল বাবা-মায়ের নিবিড় শান্তির কোলে মাথা রেখে বাবা-মায়ের আদর নিতে পারলেই যেন চরম সুখ। কিন্তু সেটুকুও তাদের অবশিষ্ট নেই। ঈদে তাদের আনন্দের পরিবর্তে বেদনার অশ্রুই একমাত্র উপহার। তারা ঠিকমত সেহেরি করতে পারে না। করতে পারে না শান্তিমত ইফতার। হয়তো সেহেরি খাওয়ার সময় বা ইফতার করার সময় মাথার ওপর পড়ছে ভয়ঙ্কর বোমা। যার আঘাতে চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছে পরিবারের সবাই।
আমার সোনামণিরা একবার চিন্তা করে দেখ তাদের সময়ই বা কিভাবে কাটছে আর ঈদ উদযাপনই বা কেমন হচ্ছে। এ সময় তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আপাতত কিছুই করার নেই। তাদের জন্য দোয়া করবে প্রাণ খুলে প্রাণ ভরে। আর এদেশে তোমাদের চারপাশে যারা আছে তাদের মধ্যে যারা রোগে-শোকে রয়েছে তাদের ভালোবাসবে। সহযোগিতার হাতকে ফুটে থাকা টকটকে ফুলের পাপড়ির মত প্রসারিত করবে। ঈদের খুশি ভাগ করে নেবে তাদের সাথে, তাদের খোঁজ-খবর নেবে তবেই ঈদের শিক্ষা ও রোজার শিক্ষার নির্ভেজাল প্রতিফলন ঘটবে।
বন্ধুরা আজ আর নয় তোমাদের জন্য একটি ছড়া লিখেই ছোট এ লেখাটি শেষ করছি।
ঈদ তবে ঈদ হবে
যদি ভালো থাকা যায়
ঈদ কোন ঈদ নয়
যদি রোগ শোক পায়।
যারা আছে রোগে শোকে
তাদেরকে নাও পাশে
ভালোবাস খুব করে
যেন তারা সুখে ভাসে।
যারা আজ ভালো নেই
যুদ্ধের দামামায়,
দোয়া কর ভালো থাক
তারা এই জামানায়।
ঈদ যেন ঈদ হয়ে
ধরা দেয় কাছে এসে,
জালিমেরা যাক চলে
সাহসের স্রোতে ভেসে।